SEBI Mutual Fund Rules: মিউচুয়াল ফান্ডে সেবির বৈপ্লবিক পরিবর্তন, খরচ কমবে বিনিয়োগকারীদের, জানুন নতুন নিয়ম
SEBI Mutual Fund Rules: দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভারতীয় শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা, সেবি (SEBI) মিউচুয়াল ফান্ডের নিয়মনীতিতে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের ঘোষণা করেছে। ১৯৯৬ সালের পুরনো নিয়মগুলিকে ঢেলে সাজিয়ে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে একগুচ্ছ নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই পরিবর্তনের মূল লক্ষ্য হলো বিনিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনা এবং সাধারণ মানুষের ওপর থেকে বাড়তি খরচের বোঝা কমানো। সেবির এই নতুন নির্দেশিকা কার্যকর হলে লগ্নিকারীদের পকেটে বাড়তি অর্থ সাশ্রয় হবে এবং ফান্ডের কার্যকারিতা আরও স্পষ্ট হবে।
টোটাল এক্সপেন্স রেশিও বা টিইআর-এর বিদায়ঘণ্টা
এতদিন পর্যন্ত মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানিগুলি ‘টোটাল এক্সপেন্স রেশিও’ (TER) বা মোট ব্যয় অনুপাতের নামে বিনিয়োগকারীদের থেকে বিভিন্ন চার্জ আদায় করত। এর মধ্যে জিএসটি, ব্রোকারেজ, স্ট্যাম্প ডিউটি এবং ম্যানেজমেন্ট ফি সব কিছুই অন্তর্ভুক্ত থাকত। ফলে একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী বুঝতে পারতেন না যে ঠিক কোন খাতে কত টাকা কাটা যাচ্ছে।
সেবি এবার এই অস্বচ্ছতা দূর করতে ‘বেস এক্সপেন্স রেশিও’ (BER) চালু করার নির্দেশ দিয়েছে। নতুন নিয়মে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলি (AMC) শুধুমাত্র তাদের পরিষেবার জন্য যে মূল ফি বা চার্জ নেবে, সেটুকুই গ্রাহকদের জানাতে হবে। এর ফলে বিনিয়োগকারীরা এখন পরিষ্কারভাবে জানতে পারবেন যে ফান্ড হাউসগুলি ঠিক কত টাকা সার্ভিস চার্জ হিসেবে নিচ্ছে।
ফান্ড পরিচালন খরচ ও ব্রোকারেজে বড় ছাড়
বিনিয়োগকারীদের রিটার্ন বাড়াতে সেবি বিভিন্ন ফান্ডের সর্বোচ্চ খরচ বা এক্সপেন্স রেশিওর ওপর লাগাম টেনেছে। ফান্ড হাউসগুলি আগে যে পরিমাণ ফি নিত, তার উর্ধ্বসীমা বা ক্যাপিং কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে সরাসরি লাভবান হবেন লগ্নিকারীরা।
সবার আগে খবরের আপডেট পান!
টেলিগ্রামে যুক্ত হননতুন খরচের তালিকা নিচে দেওয়া হলো:
| ফান্ডের ধরন | পুরনো ফি (সর্বোচ্চ) | নতুন ফি (সর্বোচ্চ) |
|---|---|---|
| ইনডেক্স ফান্ড ও ইটিএফ | ১.০০% | ০.৯০% |
| ইক্যুইটি ফান্ড অফ ফান্ডস | ২.২৫% | ২.১০% |
| লার্জ ফান্ড (৫০০ কোটির বেশি) | ১.০৫% | ০.৯৫% |
| স্মল ফান্ড (৫০০ কোটির কম) | ২.২৫% | ২.১০% |
এছাড়াও, শেয়ার কেনা-বেচার সময় যে ব্রোকারেজ চার্জ লাগত, তা লগ্নিকারীদের ঘাড়েই চাপত। সেবি সেই খরচেও বড়সড় কাটছাঁট করেছে। ক্যাশ মার্কেটের ক্ষেত্রে ব্রোকারেজ ০.১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.০৬ শতাংশ এবং ডেরিভেটিভসের ক্ষেত্রে ০.০৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.০২ শতাংশ করা হয়েছে। এই খরচ কমার ফলে ফান্ডের নেট এনএভি (NAV) বাড়বে, যা লগ্নিকারীদের রিটার্ন বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
নমিনেশন ও অন্যান্য সুবিধায় রদবদল
সেবি শুধুমাত্র খরচের দিকেই নজর দেয়নি, বরং বিনিয়োগকারীদের সুবিধা ও সুরক্ষার জন্যও বেশ কিছু নতুন নিয়ম এনেছে।
- নমিনেশন সুবিধা: এখন থেকে একজন বিনিয়োগকারী তাঁর পোর্টফোলিওতে সর্বোচ্চ ১০ জন ব্যক্তিকে নমিনি হিসেবে রাখতে পারবেন। আগে এই সংখ্যা অনেক কম ছিল।
- এক্সিট লোড: আগে ফান্ড হাউসগুলি অতিরিক্ত বাফার ফি হিসেবে ০.০৫ শতাংশ এক্সিট লোড চার্জ করতে পারত। নতুন নিয়মে এই অতিরিক্ত চার্জ সম্পূর্ণ বাতিল করা হয়েছে।
- ফান্ড ম্যানেজারের দায়বদ্ধতা: ‘স্কিন ইন দ্য গেম’ নীতি অনুযায়ী, এখন থেকে ফান্ড ম্যানেজারদের বেতনের একটি অংশ তাঁদের পরিচালিত স্কিমেই বিনিয়োগ করতে হবে। এতে ফান্ড ম্যানেজাররা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক ও দায়িত্বশীল হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সেবির এই নতুন পদক্ষেপগুলি ভারতীয় শেয়ার বাজার এবং মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পের জন্য এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এর ফলে সাধারণ মানুষের বিনিয়োগের আগ্রহ বাড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদে তাঁরা ভালো রিটার্ন পাবেন বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
দাবিত্যাগ: এই নিবন্ধটি শুধুমাত্র তথ্যের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ বাজারগত ঝুঁকির সাপেক্ষ। বিনিয়োগ করার আগে অবশ্যই সমস্ত স্কিম সংক্রান্ত নথি ভালো করে পড়ে নেবেন এবং প্রয়োজনে আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ নেবেন।