Leave Cancel: ছুটি বাতিল বিতর্ক অব্যাহত, সরকারি কর্মীদের ভোগান্তি ও ক্ষোভ, ডিএ মামলার প্রতিহিংসা?

Leave Cancel: ভারত-পাক সংঘাতের আবহে গত ৭ই মে, ২০২৫ তারিখে পশ্চিমবঙ্গ অর্থ দপ্তর রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ছুটি বাতিলের যে নির্দেশ জারি করেছিল, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরেও সেই নির্দেশিকা প্রত্যাহার না হওয়ায় কর্মীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। যেখানে কেন্দ্রীয় সরকার ছুটি বাতিলের নির্দেশ তুলে নিয়েছে, সেখানে রাজ্য সরকারের অনড় মনোভাব কর্মীদের মনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, কর্মীরা একদিকে যেমন ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রয়োজনে ছুটি পাচ্ছেন না, তেমনই এই সিদ্ধান্তকে মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) মামলার সঙ্গে জুড়ে সরকারের প্রতিহিংসামূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। কলকাতা পৌরসংস্থার মেয়র এবং রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য সরকারের এই পদক্ষেপের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন।
কর্মীদের ভোগান্তি ও ক্ষোভ:
বিভিন্ন কর্মচারী জানাচ্ছেন, ছুটি বাতিল হওয়ার কারণে তাঁরা চরম সমস্যায় পড়েছেন। একদিকে যেমন আগে থেকে পরিকল্পনা করা ভ্রমণ বাতিল করতে হচ্ছে, তেমনই গুরুতর অসুস্থ আত্মীয় পরিজনদের পাশে দাঁড়ানো বা তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করার মতো প্রয়োজনীয় কাজও করতে পারছেন না।
- এক রাজ্য সরকারি কর্মচারী জানান, “পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটানোর জন্য অনেক আগে টিকিট কেটে রেখেছিলাম। এখন ছুটি বাতিল হওয়ায় শুধু যে পরিকল্পনাটাই ভেস্তে গেল তাই নয়, মোটা অঙ্কের টাকাও লোকসান হবে। এটা খুবই হতাশাজনক।”
- আরেকজন ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “গত পরশুদিনে আমার বোনের হার্টের অপারেশন হয়েছে এবং সেখানে আমার যাওয়াটা খুবই দরকার ছিল, কিন্তু আমি যেতে পারিনি। ছুটি বাতিল থাকার কারণে আমি ছুটি পাইনি।”
- অন্য এক কর্মচারী জানান, “নিজের কাকু হঠাৎ করে অ্যাক্সিডেন্ট হয় এবং তার অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল। অনেক ইউনিট রক্তের প্রয়োজন ছিল এবং সেই রক্তের ব্যবস্থা আমাকে করতে হয়েছে।”
কর্মীদের অভিযোগ, ছুটি চেয়ে আবেদন করলে তাঁদেরকে শোকজ নোটিশ ধরানো হচ্ছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ রাজ্য সরকারের নির্দেশিকার দোহাই দিয়ে ছুটি মঞ্জুর করতে অস্বীকার করছেন।
সরকারের যুক্তি, ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য ও কর্মীদের সন্দেহ:
সরকারের পক্ষ থেকে এই ছুটি বাতিলের কারণ হিসেবে জনপরিষেবা সচল রাখার কথা বলা হয়েছে। নবান্নের অর্থদপ্তরের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব পি. কে. মিশ্রের স্বাক্ষর করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, জনস্বার্থে এবং সরকারি পরিসেবার রক্ষণাবেক্ষণের স্বার্থে এই আদেশ জারি করা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা বলবৎ থাকবে।
এই সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে সওয়াল করে রাজ্যের মন্ত্রী এবং কলকাতা পৌরসংস্থার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন “এখন সংঘর্ষ বিরতি চলছে। কখন বিরতি থেকে উইসল বেজে যাবে তখন কি হবে? এগুলো বেকারের কথাবার্তা। আমরা অলটাইম অ্যালার্ট আছি। বিশেষ করে আমার পৌরসভা নিয়ে আমি বলতে পারি যে আমরা সবসময় রেডি আছি। যেহেতু বর্ষা আসছে, এমনিতেই আমাদের এটা এমারজেন্সি সিচুয়েশনে রয়েছে।”
তিনি মূলত বোঝাতে চেয়েছেন যে, পরিস্থিতি এখনও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক নয় এবং আসন্ন বর্ষাকালীন প্রস্তুতিসহ অন্যান্য জরুরি অবস্থার জন্য প্রশাসন সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে, তাই ছুটি বাতিলের মতো কঠোর পদক্ষেপ বজায় রাখা হয়েছে।
তবে, কর্মীদের মনে এই নির্দেশের উদ্দেশ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন দানা বেঁধেছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই মনে করছেন, ডিএ মামলার জেরে সরকারের অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, এবং সেই কারণেই কর্মীদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কর্মীদের একটি অংশ মনে করছেন, সরকার সম্ভবত এলটিসি (Leave Travel Concession) এবং এইচটিসি (Home Travel Concession) -এর টাকা বাঁচানোর চেষ্টা করছে, যা সাধারণত বর্ষাকালে কর্মীরা নিয়ে থাকেন। সেই টাকা ডিএ-এর বকেয়া মেটাতে কাজে লাগানো হতে পারে। কারণ সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকারকে কর্মীদের বকেয়া ডিএ (২০০৯ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত) পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছে।
পরিস্থিতির গুরুত্ব:
যুদ্ধ পরিস্থিতি এখন শান্ত, কেন্দ্র ছুটি বাতিলের নির্দেশ তুলে নিয়েছে। এমন অবস্থায় রাজ্য সরকারের এই নির্দেশ বহাল রাখা কর্মীবান্ধব নয় বলেই মনে করছেন সকলে। একদিকে যেমন কর্মীদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন বিপর্যস্ত, তেমনই সরকারের এই সিদ্ধান্তে কর্মসংস্কৃতিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এখন দেখার, সরকার এই পরিস্থিতিতে কর্মীদের দাবি কতটা গুরুত্ব দেয় এবং কবে এই সমস্যার সমাধান করে।