DA Payment: ডিএ আটকাতে নবান্নের নতুন ছক? সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের বিস্ফোরক অভিযোগ

DA Payment West Bengal: রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ মামলা নিয়ে টানাপোড়েন অব্যাহত। একদিকে যখন কর্মীরা তাকিয়ে আছেন সুপ্রিম কোর্টের দিকে, ঠিক সেই সময়েই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ। তাঁর মতে, ডিএ প্রদান প্রক্রিয়াকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিলম্বিত করার জন্য নতুন কৌশল অবলম্বন করতে পারে রাজ্য সরকার।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ভাস্কর ঘোষ এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তাঁর মতে, রাজ্য সরকার একেবারে শেষ মুহূর্তে, অর্থাৎ নির্ধারিত তারিখের ঠিক আগে, একটি ত্রুটিপূর্ণ MA (Modification Application) ফাইল করার পরিকল্পনা করছে। এই কৌশলটির মূল উদ্দেশ্য হলো, সুপ্রিম কোর্ট যখন সেই ত্রুটি সংশোধনের নির্দেশ দেবে, তখন রাজ্য সরকার আরও কিছুটা সময় পেয়ে যাবে।
সরকারের সম্ভাব্য কৌশলগুলি কী কী?
সাক্ষাৎকারে ভাস্কর ঘোষ কয়েকটি সম্ভাব্য কৌশলের কথা উল্লেখ করেছেন, যা রাজ্য সরকার অবলম্বন করতে পারে বলে তিনি মনে করছেন:
- শেষ মুহূর্তে আবেদন: নির্ধারিত তারিখের ঠিক আগে আবেদন করে ইচ্ছাকৃতভাবে দেরি করানো, যাতে আদালত ত্রুটি সংশোধনের জন্য বলে এবং রাজ্য সময় পায়।
- বকেয়ার পরিমাণ নিয়ে বিভ্রান্তি: কোন কর্মীদের ডিএ প্রাপ্য এবং কতদিনের বকেয়া রয়েছে, সেই বিষয়ে স্পষ্টীকরণের নামে বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা হতে পারে। ভাস্কর ঘোষের মতে, আমলাদের একাংশ এই ধরনের কৌশল তৈরিতে সাহায্য করছেন।
- কিস্তিতে ডিএ প্রদানের প্রস্তাব: এমনও শোনা যাচ্ছে যে, সরকার বকেয়া ডিএ তিনটি কিস্তিতে দেওয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানাতে পারে।
কর্মীদের প্রতি বার্তা ও আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি
এই সমস্ত আশঙ্কার মধ্যেও কর্মীদের মনোবল না হারানোর আবেদন জানিয়েছেন ভাস্কর ঘোষ। তিনি বলেন, রাজ্য সরকার যে পদক্ষেপই নিক না কেন, তা শেষ পর্যন্ত কর্মীদের পক্ষেই যাবে। তাঁর ধারণা, এর ফলে আদালত ৫০% ডিএ দেওয়ার নির্দেশও দিতে পারে এবং তা কঠোরভাবে কার্যকর করার কথাও বলতে পারে। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের মূল লক্ষ্য হলো, ডিএ-কে কর্মীদের মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
ভাস্কর ঘোষ আরও বলেন, আদালতের পাশাপাশি কর্মীদেরও নিজেদের একত্রিত শক্তি প্রদর্শন করতে হবে। প্রয়োজনে সরকারি দপ্তরে কাজ বন্ধ করার মতো কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও তিনি বলেন। তাঁর মতে, আদালতের বাইরের চাপও সমানভাবে জরুরি। এই কারণেই ‘নবান্ন অভিযান’-এর মতো কর্মসূচিতে সকলকে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানিয়েছেন।
দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ
ভাস্কর ঘোষ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের মারাত্মক অভিযোগও এনেছেন। তাঁর কথায়, সরকার সমর্থক কর্মচারী ফেডারেশনগুলিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাড়ির কাছে পোস্টিং, কাজের সময় অফিস থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অনুমতি এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাঁদের সন্তুষ্ট রাখা হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তাঁর মতে, এই সংগঠনগুলিই ডিএ প্রদানের প্রক্রিয়াকে বাধা দেওয়ার জন্য ভিতর থেকে কাজ করছে।
রাজ্য জুড়ে বদলি প্রক্রিয়ায় ব্যাপক দুর্নীতি চলছে বলেও তিনি সরব হন। যেকোনো ধরনের বেআইনি নিয়োগ বা বদলির খবর থাকলে তা সামনে আনার জন্য তিনি সকলকে অনুরোধ জানিয়েছেন, যাতে সেই বিষয়গুলি জনসমক্ষে আনা যায়।
সব মিলিয়ে, বকেয়া ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীদের আন্দোলন এক নতুন মোড় নিয়েছে। একদিকে আইনি লড়াই এবং অন্যদিকে রাজপথের আন্দোলন –এই দুইয়ের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার আদায়ে মরিয়া কর্মীরা। এখন দেখার, আগামী দিনে এই পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়।