পশ্চিমবঙ্গ

Karam Puja: করম পূজা কী? কারা পালন করেন এই উৎসব? বাংলার এক বর্ণময় লোক উৎসবের অজানা কথা

Karam Puja: করম পূজা হলো ঝাড়খণ্ড, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, আসাম, ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিতে উদযাপিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ফসল উৎসব। এটি মূলত সৃষ্টি ও উৎপত্তির উৎসব হিসাবে পালিত হয়। ‘করম’ নামটি ‘কর্ম’ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। এই উৎসবটি ভাদ্র মাসের শুক্লা একাদশীতে অনুষ্ঠিত হয় এবং প্রকৃতি ও উর্বরতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে। পশ্চিমবঙ্গ-এর মানভূম অঞ্চলের (পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর) মানুষের কাছে এই উৎসবের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।

করম পূজার প্রস্তুতি ও জাওয়া পাতা

করম পূজার সাত দিন আগে থেকে অবিবাহিত তরুণীরা এই উৎসবের প্রস্তুতি শুরু করে। তারা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নদী বা পুকুরে স্নান করে এবং বাঁশ ও কাঠি দিয়ে তৈরি ছোট ঝুড়িতে বালি ভরে। এরপর গ্রামের প্রান্তে একটি নির্দিষ্ট স্থানে সেই ঝুড়িগুলিকে তিনবার প্রদক্ষিণ করে “জাওয়া” গান গায়। এই ঝুড়িগুলিতে সর্ষে, মুগ, ছোলা এবং অন্যান্য বীজ তেল ও হলুদ দিয়ে মিশিয়ে রোপণ করা হয়। এই ‘জাওয়া’ পাতাগুলি সৃজনশীলতার প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়।

পূজার মূল পর্ব

পূজার দিন পুরুষরা শাল গাছের ডাল সংগ্রহ করে। দুটি ডাল গ্রামের একটি নির্দিষ্ট স্থানে রোপণ করা হয় এবং সন্ধ্যায় করম ঠাকুর বা করম গোঁসাই এবং ধরম ঠাকুর হিসাবে পূজা করা হয়। অবিবাহিত মেয়েরা সারাদিন উপবাস করে এবং সন্ধ্যায় ফুল, ফল এবং অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে পূজা দেয়। এরপর সারা রাত ধরে গান এবং নাচ চলে।

পরদিন সকালে, মেয়েরা ‘জাওয়া’ থেকে অঙ্কুরিত বীজগুলি তুলে নেয় এবং নিজেদের মধ্যে বিতরণ করে, যা তারা তাদের বাড়ির বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেয়। এরপর করম ডালগুলি জলে বিসর্জন দেওয়া হয়। পূজা শেষে, মেয়েরা একে অপরের কব্জিতে ‘করমডোর’ বা রাখি বেঁধে দেয়।

সবার আগে খবরের আপডেট পান!

টেলিগ্রামে যুক্ত হন

করম গান ও নাচ

এই উৎসবের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো “জাওয়া-গান”। এই গানগুলি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মৌখিকভাবে চলে আসছে এবং এতে নারীদের সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলি প্রকাশিত হয়। এই গানের সাথে “করম” নাচ পরিবেশন করা হয়, যেখানে মেয়েরা ‘জাওয়া’-কে ঘিরে বৃত্তাকারে নাচে। এই গান এবং নাচগুলি মানুষের আনন্দ, দুঃখ এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরে এবং এটি বাংলা লোকসাহিত্যের একটি মূল্যবান অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়।

সরকারি ছুটি

২০২৩ সালে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করম পূজার জন্য পূর্ণ দিবস সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছিলেন এবং বর্তমান বছরের জন্যও ৩ সেপ্টেম্বর করমপূজার ছুটির বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে, যা এই উৎসবের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে তুলে ধরে।

WBPAY Team

আমাদের প্রতিবেদন গুলি WBPAY Team এর দ্বারা যাচাই করে লেখা হয়। আমরা একটি স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম যা পাঠকদের জন্য স্পষ্ট এবং সঠিক খবর পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য এবং সাংবাদিকতার মান সম্পর্কে জানতে, অনুগ্রহ করে আমাদের About us এবং Editorial Policy পৃষ্ঠাগুলি পড়ুন।
Back to top button