DA News: “নবান্নের মালকিনের কিছু হবে না..”- রাজ্যের আবার সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া নিয়ে আর কি বললেন মলয় মুখোপাধ্যায়

DA News: মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) মামলা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মীদের ভাগ্য আবার একবার সুপ্রিম কোর্টের দরজায় পৌঁছাতে পারে। গত ১৬ই মে, ২০২৫-এ দেশের সর্বোচ্চ আদালত রাজ্য সরকারকে একটি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশে বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ ছয় সপ্তাহের মধ্যে মিটিয়ে দেওয়ার কথা বললেও, রাজ্য সরকার সেই রায় নিয়ে স্পষ্টীকরণের জন্য আবার সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথা ভাবছে বলে জানা গেছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় এই বিষয়ে তাঁর তীব্র মতামত জানিয়েছেন।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং রাজ্য সরকারের পদক্ষেপ
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি সন্দীপ মেহতার বেঞ্চ গত ১৬ই মে এক ঐতিহাসিক অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশে জানায় যে, রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘভাতার ২৫ শতাংশ ছয় সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এই নির্দেশের পর রাজ্য সরকারি কর্মীদের মধ্যে আশার আলো দেখা গেলেও, সম্প্রতি জানা গিয়েছে যে রাজ্য সরকার এই নির্দেশ নিয়ে কিছু বিষয়ে স্পষ্টতা চাইতে পারে। এর জন্য তারা আবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছে।
এই প্রসঙ্গে কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা মিডিয়ার মাধ্যমেই খবরটি পেয়েছি। যদি রাজ্য সরকার সত্যিই এমন কোনও পদক্ষেপ নেয়, তবে তা দুর্ভাগ্যজনক। কারণ, সুপ্রিম কোর্ট পরিষ্কারভাবেই কলকাতা হাইকোর্ট এবং স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালের (স্যাট) রায়কে মান্যতা দিয়েই এই নির্দেশ দিয়েছিল।”
ডিএ মামলার প্রেক্ষাপট
রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ মামলা দীর্ঘদিনের। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের সমহারে ডিএ পাওয়ার দাবিতে তাঁরা প্রথমে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল (স্যাট) এবং পরে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। উভয় আদালতেই রায় কর্মীদের পক্ষে যায়। কলকাতা হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছিল যে, ডিএ কর্মীদের আইনি অধিকার এবং তা রাজ্য সরকারকে বাজারের মুদ্রাস্ফীতির নিরিখে অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (AICPI) অনুযায়ী বছরে দু’বার করে দিতে হবে।
- স্যাটের রায়: ২০১৯ সালের ২৬শে জুলাই স্যাট রায় দেয় যে, রোপা (ROPA) নিয়ম অনুযায়ী রাজ্যকে কর্মীদের বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিতে হবে।
- হাইকোর্টের রায়: পরবর্তীকালে কলকাতা হাইকোর্টও স্যাটের রায়কেই বহাল রাখে এবং ডিএ কর্মীদের মৌলিক অধিকারের সমতুল্য বলে মন্তব্য করে।
- সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ: রাজ্য সরকার হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায়। প্রায় ১৭-১৮টি শুনানির পর অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট এই অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ দেয়।
কর্মীদের প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
রাজ্য সরকারের এই নতুন পদক্ষেপে কর্মীরা হতাশ। মলয় মুখোপাধ্যায় এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “রাজ্য সরকার যদি রোপা রুল ভালোভাবে পড়ত, তাহলে তাদের কোনও স্পষ্টীকরণের প্রয়োজনই হতো না। রোপাতে পরিষ্কার বলা আছে কিভাবে ডিএ গণনা করা হবে। এখন আবার সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার অর্থ হলো সময় নষ্ট করা।” তিনি ক্ষোভের সঙ্গে আরও যোগ করেন, “হাত গুটিয়ে বসে থাকলে নবান্নের মালকিনের কিছু হবে না, ভুগতে হবে সাধারণ কর্মীদের। কিন্তু আমরা শেষ দেখে ছাড়ব। আমাদের অর্থ ও শ্রম গেলেও আমরা পিছু হটব না।” কর্মীদের সংগঠনগুলির মতে, রাজ্য সরকার আসলে ডিএ দেওয়ার বিষয়টি দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করছে।
সরকারের আর্থিক পরিস্থিতি
রাজ্য সরকার বারবার তাদের আর্থিক সংকটের কথা তুলে ধরেছে। তাদের মতে, একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ বকেয়া ডিএ মেটানো রাজ্যের পক্ষে কঠিন। যদিও কলকাতা হাইকোর্ট আগেই জানিয়েছিল যে, আর্থিক কারণ দেখিয়ে কর্মীদের আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না। কর্মীদের সংগঠনগুলির অভিযোগ, রাজ্য সরকার ‘খেলা-মেলা’র মতো অনুষ্ঠানে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে পারলেও, কর্মীদের ন্যায্য পাওনা দেওয়ার সময় আর্থিক অনটনের কথা বলে।
সব মিলিয়ে, ডিএ মামলা এক নতুন মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। রাজ্য সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছে কয়েক লক্ষ সরকারি কর্মী এবং পেনশনভোগী। রাজ্যের পরবর্তী পদক্ষেপ ও সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে কী রায় দেয়, তার উপরেই নির্ভর করছে তাঁদের ভবিষ্যৎ।